বাড়ির পর্দা নির্বাচনে ৭টি বিবেচ্য বিষয়

কথায় আছে, পর্দা ঘরের চেহারা পরিবর্তন করে ফেলতে পারে । তবে পর্দাগুলো হতে হবে আপনার ঘরের সাথে মানানসই। এই কারণে পর্দা কেনার সময় সচেতন হওয়া জরুরী। তাই পর্দা কেনার আগে কাপড়, নকশা, রঙ এবং ধরনের কথা মাথায় রাখতে হবে। 

বাজারে হাজারো রকমের পর্দার ভিড়ে বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। আলোচ্য ৭টি বিষয় আপনাকে ঘরের জন্য সঠিক পর্দা কেনার সিদ্ধান্তে সাহায্য করবে। 

১। পর্দা ব্যবহারের উদ্দেশ্য

পর্দা ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য বাড়ির অন্দরমহলের গোপনীয়তা বজায় রাখা।  এছাড়াও পর্দা আপনার জানালা দিয়ে আসা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে, ও আপনার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। সবসময় তাই আপনার উদ্দেশ্য বুঝে পর্দা বাছাই করুন। কীভাবে ব্যবহার করতে চান, তা না ভেবে কখনো পর্দা কেনা উচিত নয়। 

২। পর্দার কাপড়ের ধরন

পর্দা তৈরি হয় অনেক ধরনের কাপড় দিয়েই। তবে ঘরের আবহের সাথে মিল রেখেই পর্দার কাপড়ের ধরন বাছাই করা উচিত। 

সুতি, লেইস, লিনেন, এবং ভয়েল কাপড়গুলো হয় হালকা এবং নরম ধরনের। আপনার ঘর যদি ছোট হয়ে থাকে, তবে এ ধরনের পর্দা আপনার ঘরের জন্য আদর্শ। এই ধরনের পর্দা আপনার ঘরে আলো বাতাস ঢুকতে সাহায্য করবে, এবং আপনার ছোট ঘরকে কম ঘিঞ্জি দেখাতে সাহায্য করবে। এই ধরনের কাপড়গুলো ওয়াশিং মেশিনে ধোঁয়া যায়, দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এদের রং ও অনেক দিন ভালো থাকে। 

ভেলভেট এর পর্দাগুলো মোটা এবং ভারী হয়ে থাকে। ভেলভেটের পর্দা বড় সিলিং থেকে ফ্লোর ছোঁয়া জানালার জন্য আদর্শ। ভেলভেটের পর্দা আপনার ঘরে যোগ করবে রাজকীয়তা এবং নান্দনিকতা।

সিল্ক কাপড় এর উজ্জ্বল এবং রঙিন হিসেবেই পরিচিত। সিল্কের কাপড় দিয়ে হালকা এবং স্নিগ্ধ পর্দা তৈরি সম্ভব।

৩। কাপড়ের রঙ এবং নকশা

পর্দার রঙ ঘরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আপনার ঘর ও ঘরের ফার্নিচারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পর্দা বাছাই করুন। বিপরীত রঙ এর পর্দা বাছাই করুন, যা আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলবে। 

গাঢ় রঙ এর পর্দা সবচেয়ে বেশি মানানসই বড় ঘরে অথবা যে ঘরের সিলিং অনেক উঁচুতে, সেসকল ঘরে। এ ধরনের পর্দা বড় ঘরের শূণ্যতা কমায়, এবং ঘরকে একটি আরামদায়ক পরিবেশ দেয়। হালকা রঙ এর দেয়ালের সাথে এই ধরনের রঙ এর পর্দা সবচেয়ে মানানসই।

অন্যদিকে, সব ধরনের সময়ের সাথেই মানিয়ে যায় হালকা রং এর পর্দা। এটি আপনার ঘরকে বড় দেখাতে সাহায্য করে, এবং ঘরের বায়ু চলাচল নিশ্চিত করে। যেহেতু হালকা রঙ, তাই এ ধরনের পর্দা নোংরআ-ও হয় দ্রুত। তাই হালকা রঙের পর্দা কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করা প্রয়োজন। 

আপনি যদি রঙিন ও বিভিন্ন নকশা পছন্দ করে থাকেন, কিন্তু চান না আপনার ঘরের পর্দা অনেক চটকদার হোক, তবে আপনি অল্প নকশার রঙিন পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের পর্দা আপনার ঘরে আনবে স্নিগ্ধতা ও নমনীয়তা, সাথে করে তুলবে আকর্ষণীয়-ও।

৪। পর্দার সাথে থাকা লোহালক্কড়

পর্দার যার সাহায্যে ঘরে সাজাবেন, সেই রড-ও হওয়া চাই পর্দার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভারীর পর্দার জন্য প্রয়োজন পড়ে মোটা রড-এর, অন্যদিকে হালকা পর্দার জন্য প্রয়োজন চিকন রড-এর। রড এরও রয়েছে বিভিন্ন ধরন। কিছু রড হয়ে থাকে কাঠের, কিছু রডে থাকে লোহার প্রলেপ। রয়েছে সাইজ ও লম্বার পার্থক্য-ও। পর্দার রড এর সবগুলো অংশ একে অপরের সাথে মিললো কিনা, তা নিশ্চিত করুন। আপনার পর্দার রড যদি নিচে হয়, তবে এটি আপনার পর্দার দৈর্ঘ্য-ও কমিয়ে দিবে। আপনি নিশ্চয়ই তা চান না!

৫। পর্দার দৈর্ঘ্য

পর্দার সাইজের ভুল আপনার ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করতে যথেষ্ট। বাড়ির রান্নাঘরের জন্য জানালার সমান সাইজের পর্দা উপযুক্ত। এ ধরনের পর্দা কয়েক ইঞ্চি লম্বা হয় এবং জানালার সমান হয়। 

ফ্লোরসাইজ পর্দা গুলো আপনার ঘর ও জানালাকে লম্বা দেখাবে। এই ধরনের পর্দাগুলো যেহেতু ঘরের মেঝে অত স্পর্শ করে না, তাই ঘরের সেসকল স্থানে এগুলো বেশি মানায়, যেখানে সবার চলাচল অনেক বেশি।

ট্রাউজার-পর্দা ঘরের ডাইনিং রুম, বেডরুমের জন্য বেশি মানানসই যেখানে সবার চলাফেরা কম হয়।

৬। রেডি মেইড বনাম কাস্টোম মেইড

রেডি মেইড পর্দা আপনি দোকানে গেলে সহজেই কিনতে পারেন। যদিও আপনার পছন্দ মতোন স্টাইলের না হয়, তবুও দোকানগুলোয় থাকে অনেক ধরনের নকশা এবং বৈচিত্র্য।  যদি আপনার স্বল্প সময়ের মধ্যে পর্দার দরকার হয়, এবং আপনার তেমন কোনো আলাদা চাহিদা না থাকে, তবে রেডি মেইড পর্দা-ই আপনি কিনে ফেলতে পারেন। 

কাস্টোম মেইড পর্দা বানাতে প্রয়োজন হয় আপনার জানালার পরিমাপ। এ ধরনের পর্দা বানাতে খরচ বেশি পড়তে পারে, তবে এ পদ্ধতিতে আপনি আমার ইচ্ছে মতন নকশার পর্দা বানাতে পারেন। এ ধরনের পর্দা আপনার ঘরের পরিবেশের সাথে মানিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। 

পর্দা বাছাই হতে পারে বেশ ঝামেলার। তাই আপনার বাড়ির জন্য পর্দা নির্বাচনের আগে এই টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখুন।  

X